ঘুরে আসুন শেরপুরের গজনী অবকাশ থেকে......

গজনী অবকাশ কেন্দ্র শেরপুর 




পাহাড়ের ঢালে, পাহাড় চূড়ায় সারি সারি শাল, গজারী,সেগুন, মহুয়া,  ইউকেলিপটাস, আকাশমনি, মিলজিয়ামসহ আরো নাম না জানা কত শত পাহাড়ি গাছ, বনফুল ও ছায়াঢাকা বিন্যাস যেন বিশাল ক্যানভাসে সুনিপুন শিল্পীর রঙ-তুলি দিয়ে আঁকা। গজনী অবকাশ অতি সহজেই প্রকৃতিপ্রেমীদের হৃদয়ে দোলা দিয়ে যেতে পারে বলেই সারা  বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার প্রকৃতিপ্রেমী নারী-পুরুষ, শিশু, বয়োবৃদ্ধসহ সবাই ছুটে আসেন গজনী অবকাশের মন ছুঁয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করতে।


লাল মাটির উঁচু পাহাড়,  গহীন জঙ্গল, টিলা, মাঝে সমতল  দু’পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে ছন্দ তুলে পাহাড়ী ঝর্ণার এগিয়ে চলা। পাহাড়, বনানী, ঝরণা, হ্রদ এতসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যেও অনেক কৃত্রিম সৌন্দর্যের অনেক সংযোজনই রয়েছে গজনী অবকাশে ।

গজনী অবকাশে কি কি আছে তা  নিম্নে  বিভিন্ন অংশের বর্ণনা দেওয়া হলঃ

 ডাইনোসরঃ
উচ্চতা 33 ফুট। নির্মাণ কাল 2007 পরিকল্পনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় মোঃ আবু বকর সিদ্দিক, জেলা প্রশাসক, শেরপুর। নির্মাতা ভাস্কর হারুন অর রশীদ খান। এটি একটি বৃহৎ ভাস্কর্য যা দেখে আমরা পৃথিবীর বিবর্তনের  ইতিহাস জানতে পারি।

 ড্রাগনঃ
এটি একটি স্থাপত্যধর্মী ভাস্কর্য। পৃষ্ঠপোষকতায় জনাব নওফেল মিয়া, জেলা প্রশাসক, শেরপুর। ড্রাগনের মাথা দিয়ে প্রবেশ করে ভিতর দিয়ে বের হয়ে যাওয়া একটা অন্যরকম অনুভূতি ।

 জলপরীঃ
ঝিলের পাড়ে নির্মিত  জলপরি। দেখে মনে হয় জল থেকে সদ্য উঠে এসে  শ্রান্ত ক্লান্ত অবস্থায় বসে আছে। সাদা সিমেন্টে নির্মিত ভাস্কর্যটি পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন নওফেল মিয়া, জেলা প্রশাসক, শেরপুর। নির্মাতা  ভাস্কর রায়হান ও শীষ ।



 দন্ডায়মান জিরাফঃ
উচ্চতা ২৫ ফুট। নির্মাণকাল ২০০৮। এটি  গজনীর অন্যতম বৃহৎ ভাস্কর্য। জেলা প্রশাসক সামছুন্নাহার বেগমের পৃষ্ঠপোষকতায় এটি নির্মিত হয়।


ওয়াচ টাওয়ারঃ
সুউচ্চ শীর্ষ পাহাড় চূড়ায় নির্মিত হয়েছে আধুনিক স্থাপত্য রীতিতে ৬৪ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন নয়নকাড়া ‘সাইট ভিউ টাওয়ার’। এ টাওয়ারের চূড়ায় উঠে এলে চারদিকে শুধু দেখা যায় ধূসর, আকাশী ও সবুজের মিতালি।

পদ্ম সিড়িঃ
এটিও জনাব নওফেল মিয়ার চিমত্মা চেতনা থেকে তৈরী হয়েছিল। সিড়ি বেয়ে আকাশ পানে ওঠা এক অন্যবদ্য সৃষ্টি। রেস্ট হাউস থেকে পাহাড়ের পাদদেশে নামার জন্য আঁকাবাঁকা প্রায় দু’শতাধিক সিঁড়িসহ অত্যন্ত আকর্ষণীয় ‘পদ্ম সিড়ি’ রয়েছে। ‘পদ্ম সিড়ির পাশেই গজারী বনে কাব্য প্রেমীদের জন্য কবিতাঙ্গনের গাছে গাছে ঝোলানো আছে প্রকৃতিনির্ভর রচিত কবিতা। পাহাড়ের পাদদেশে বর্ষীয়ান বটবৃক্ষের ছায়াতলে শান বাঁধানো বেদীসহ বিশাল চত্ত্বর।     


আপনাদের  প্রশ্নঃ কিভাবে গজনী অবকাশ যাব ? 


গজনী অবকাশে আসার জন্য সড়ক পথে যাতায়ত অনেক সহজ। গজনী অবকাশ পর্যন্ত রয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের মসৃণ পিচঢালা পথ। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে যাতায়াতই সব থেকে ভালো । উত্তরবঙ্গ থেকে টাঙ্গাইল-জামালপুর হয়েও আসতে পারেন সড়ক পথে। শেরপুর শহর থেকে গজনী অবকাশের দুরত্ব মাত্র ৩০ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে সরাসরি মাইক্রো বাস অথবা প্রাইভেটকারে গজনী অবকাশ যেতে পারেন। ঢাকা থেকে নিজস্ব বাহনে মাত্র সাড়ে তিন থেকে চার ঘন্টায় ঝিনাইগাতীর গজনী অবকাশে আসা যায়। 

এ ছাড়া ঢাকার মহাখালি থেকে ড্রিমল্যান্ড বাসে শেরপুর আসা যায়। মহাখালী থেকে দুপুর ২টায় ছাড়ে বাস । এছাড়া ঢাকা বঙ্গবন্ধু জাতীয় ষ্টেডিয়াম ৪ নং গেইট থেকে সরাসরী বিকাল ৩-৪টায় শিল্প ও বণিক সমিতির গাড়ী ঝিনাইগাতীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। যারা ড্রিমল্যান্ডে আসবেন। শেরপুর নেমে নিউমার্কেট থেকে ভাড়ায় মাইক্রোবাস ৫০০ টাকায় সোজা গজনী যাতায়াত করা যায়। শেরপুর থেকে লোকাল বাস,টেম্পু, সিএনজি অথবা রিক্সায় গজনী অবকাশ কেন্দ্রে যাওয়া যায়। 

 গজনী অবকাশের আবসন ব্যবস্থা 

শেরপুর জেলা সদরে রাতযাপনের জন্য ৫০ থেকে ৫শত টাকায় গেষ্ট হাউজ রোম ভাড়া পাওয়া যায়।শেরপুর শহরের রঘুনাথ বাজারে হোটেল সম্পদ, শহীদ বুলবুল সড়কে কাকলী ও বর্ণালী গেষ্ট হাউজ, নয়ানী বাজারে ভবানী প্লাজা, বটতলায় আধুনিক মানের থাকার হোটেল রয়েছে। তা ছাড়া অনুমতি সাপেক্ষে থাকতে পারেন সার্কিট হাউজ, সড়ক ও জনপথ, এলজিইডি, পল্লী বিদ্যুৎ কিংবা এটিআই বেষ্ট হাউজে। ঝিনাইগাতী জেলা প্রশাসন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও বন-বিভাগের ডাকবাংলোতে থাকতে পারবেন।

গজনী অবকাশের প্রবেশ ফি

গজনী অবকাশ কেন্দ্রে গাড়ী প্রবেশের জন্য উপজেলা পরিষদ চেকপোষ্ট থেকে বাস-কোচ, ট্রাক-৩ শত টাকা, মাইক্রোবাস, পিকআপ, মেক্সি-১শত ৫০টাকা, জিপ,কার,টেম্পু-১শত টাকা, সিএনজি-৫০টাকা দিয়ে গেটপাস নিতে হবে। অন্যথায় গজনী অবকাশ কেন্দ্রে গাড়ী ঢুকাতে পারবেন না। তা ছাড়া সীমান্ত পথে বিজিবি নকশী ক্যাম্পে সে পাস দেখাতে হবে। আর অবকাশ কেন্দ্রে টাওয়ারের জন্য জন প্রতি ৫ টাকা, শিশু পার্কের জন্য-১০টাক, প্যাডেল বোড ৩০মিনিটে ৪জনে -৬০টাকা, পানসিতরী নৌকায় জন প্রতি-১০টাকা এবং পাতালপুরি ড্রাগন ট্যানেলে জন প্রতি-৫টাকা প্রদর্শনী ফি রয়েছে। 

 গজনী অবকাশের  কোথায় যোগাযোগ করবেন

 একটি কথা ভূলবেন না, গজনী অবকাশ ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন। সীমান্তের দিকে না যাওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। অন্যথায় বিপদ ঘাড়ে চেপে বসতে পারে। শেরপুর জেলা প্রশাসকের নেজারত শাখা “(ফোন) ০৯৩১-৬১২৮৩/০৯৩১-৬১৯৫৪/০৯৩১-৬১৯০০, সার্কিট হাউজ ০৯৩১-৬১২৪৫ (হোটেল সম্পদ) ,০১৭১২৪২২১৪৫( হোটেল সাইদ) ০৯৩১-৬১৭৭৬ (কাকলী গেষ্ট হাউজ), ০১৯১৪৮৫৪৪৫০( টিকেট কাউ্ন্টার চেকপোষ্ট), ০৯৩১-৬১২০৬/০৯৩২-২৭৪৪০০১(ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার) ঝিনাইগাতী প্রেসকাবঃ- ০১৭৩৬৯৯১৪০৫
সংগ্রহঃ মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন